সিবিএন ডেস্ক: দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক কে হচ্ছেন-তা ঠিক করতে আগামী বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) মজলিসে শুরার বৈঠক ডাকা হয়েছে। এদিন সকাল ১০ টায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এ বৈঠক শুরু হবে। শুরার এই বৈঠকেই ঠিক হবে কে হচ্ছেন আল্লামা আহমদ শফীর উত্তরসূরি। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানের শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা পরিচালক পদেও নতুন নিযুক্তি দেবে দেশের প্রাচীন কওমি মাদ্রাসাটি।
২০২০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর আল্লামা আহমদ শফীর মৃত্যুর পরেরদিন (১৯ সেপ্টেম্বর) মজলিসে শুরার বৈঠকে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালনা করতে তিন জনের একটি কমিটি করে দেওয়া হয়। ওই কমিটিতে ছিলেন, মাওলানা শেখ আহমদ, মুফতি আব্দুস ছালাম ও মাওলানা ইয়াহিয়া।
প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক জানান, তিন জনের বর্তমান প্যানেল থেকে প্রতিষ্ঠানের মুহাদ্দিস মাওলানা শেখ আহমদকে ‘মহাপরিচালক’ করতে চাইছে সরকার প্রভাবিত পক্ষ। কোনও কোনও শিক্ষকের দাবি, আহমদ শফীর মৃত্যুর পর তার সন্তান আনাস মাদানীসহ যাদের বের করে দেওয়া হয়েছিল, তাদের ফিরিয়ে নিতে ও ক্ষমতাসীনদের প্রভাব নিরঙ্কুশ রাখতে শেখ আহমদকে মহাপরিচালক করতে চায় একটি পক্ষ। আর যেহেতু শুরা সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে মহাপরিচালক নিয়োগ করা হবে, সে কারণেই সংস্থার লোকজন সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
মাদ্রাসা সংশ্লিষ্ট একজনের ভাষ্য, হাটহাজারী মাদ্রাসাকে সরকারের প্রভাব বলয়ে রাখার কারণ হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি ‘উম্মুল মাদারিস’ হিসেবে পরিচিত। সারাদেশের মাদ্রাসাকে এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।
নতুন মহাপরিচালক হিসেবে সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা আহমদ দিদার কাসেমীর নামও জোরেশোরে আলোচনায় আছে। বিশেষ করে সরকারবিরোধী পক্ষটি চাইছে শেখ আহমদকে না দিয়ে তাকে মহাপরিচালক করতে।
এ বিষয়ে শুরা কমিটির সদস্য, নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা হাবিবুর রহমান কাসেমী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আগামী বুধবার শুরা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে কে হবেন মহাপরিচালক।’ হাবিবুর রহমান জানান, গোপন ব্যালট বা আলোচনার মাধ্যমেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিস, ইফতা ও তাফসির বিভাগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, মজলিসে শুরা ও মহাপরিচালক নিয়োগ নিয়ে ছাত্রদের পক্ষ থেকে নীরবে আবেদন করা হয়েছে। এই আবেদনে তারা শুরা কমিটি পুনর্গঠনের প্রস্তাব করেন। আবেদনে সারা দেশের প্রত্যেক জেলার আলেম ও বড় বড় মাদ্রাসার মুহতামিমদের অন্তর্ভুক্ত করে শুরা কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করা হয়।
শিক্ষার্থীদের দাবিতে বলা হয়, প্রয়োজনে বেফাক (কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড) ও হাইয়াতুল উলইয়া’য় যেভাবে নিরপেক্ষ কাউন্সিল হয়েছিল সেভাবেই মহাপরিচালক নিয়োগ দেওয়া হোক।
জানতে চাইলে হাটহাজারী মাদ্রাসার পরিচালক-শুরার প্যানেল সদস্য ও কমিটির সদস্য মাওলানা ইয়াহিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মজলিসে শুরার বৈঠকেই মহাপরিচালক ঠিক করা হবে। আল্লামা শফী সাহেবের মৃত্যুর পর এতদিন তিন জনের (মজলিসে এদায়ি) পরিচালক কমিটি মাদ্রাসা পরিচালনা করেছেন। শুরার মিটিংয়ে নতুন একজনকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।’
ইয়াহিয়া জানান, দেশে ও দেশের বাইরেও হাটহাজারী মাদ্রাসার মজলিসে শুরার সদস্য রয়েছেন। এরমধ্যে বেশ কয়েকজন গত এক-দেড় বছরে মারা গেছেন। বুধবারের বৈঠকে অন্তত ১৫-১৬ জন উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
গত ১৯ আগস্ট মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হাটহাজারী মাদ্রাসার শায়খুল হাদিস ও শিক্ষা পরিচালকের পদটি খালি হয়। বুধবারের শুরার বৈঠকে এ দুটি পদেও নতুন নিযুক্তি আসবে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষক। এ ক্ষেত্রে মাওলানা আহমদ দিদার, মুফতি আবদুস ছালাম, মাওলানা ইয়াহইয়ার নাম উল্লেখযোগ্য। তবে বাবুনগরীর মতো একজনের হাতে দায়িত্ব না দিয়ে ভিন্ন-ভিন্ন ব্যক্তিকে পদ দেওয়া হতে পারে।
এ বিষয়ে পরিচালক প্যানেলের সদস্য মাওলানা শেখ আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মাওলানা বাবুনগরীর মৃত্যুর কারণে শূন্য পদগুলো পূরণের জন্য বুধবার শুরার বৈঠক ডাকা হয়েছে। দায়িত্বে কে আসবেন, এটা বলতে পারবো না, এটা শুরা ঠিক করবে।’
প্রসঙ্গত, বুধবারের বৈঠকে নতুন শুরা সদস্যও যুক্ত করা হতে পারে, এমন আভাস দিয়েছেন হাটহাজারী মাদ্রাসার শুরার এক সদস্য।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।